গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
গল্প লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

রবিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৫

বাবার সাথে যখন রেস্টুরেন্ট এ খেতে আসতাম তখন ও ছেলেটিকে দেখতাম। এখনো খেতে আসলে দেখি।
আগে যখন আসতাম তখন ছেলেটি ছোট ছিল, আমিও। আমার সাথে সাথে ছেলেটিও বড় হতে লাগল। নাকি ছেলেটির সাথে সাথে আমি?
আগে যখন আসতাম, তখন সে ছিল ওয়েটারের হেল্পপার। পানি এগিয়ে দিত, টেবিলটি পরিস্কার করে দিত।
এখন সে নিজে ওয়েটার। সাথে হেল্প করার মত আরেকটা ছোট ছেলে রয়েছে।
আমাকে যখন জিজ্ঞেস করল কিছু লাগবে? আমি বললাম না, উল্টো জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছো। বলল ভালো। একটু ভালো নাকি বেশি?
এবার উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে হাসি দিল। হাসি দিলে প্রতি উত্তরে হাসি দিতে হয়? হয়তো হ্যা, নয়তো না। না হলে নাই। আমিও হাসি দিলাম। বললাম বসো। আমি একটু সরে বসলাম। বসতে চাইলো না। জোর করে বসিয়ে দিলাম।
জিজ্ঞেস করলাম এখানে চাকরি করা ছাড়া আর কি করে।
– আর কিছু না।
বিয়ে করেছো?
– না।
কেনো?
অন্য দিকে তাকালো। তারপর আবার আমার দিকে। বলতে ইতস্তত করল।
– যাকে পছন্দ করতাম, তার বিয়ে হয়ে গেছে।
আহ! কেন? তুমি বিয়ের প্রস্তাব দাও নি?
– এক চাচা এর মাধ্যমে প্রস্তাব দিয়েছি। আমার সাথে বিয়ে দিবে না বলেছিল…
কেনো?
– আগেই বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে তাই। তাছাড়া হয়তো আমাদের অনেক টাকা নেই, তাই হয়তো।
এখন কি করবে?
– কিছু না।
মানে এখানে জব করা ছাড়া ভবিষৎএ কি করতে চাও?
– বিশাল একটা রেস্টুরেন্ট দিব…
– এরপর?
এরপর জানি না।
ছেলেটির মত আমিও জানি না। আমি এরপর কি করব। ছেলেটির সাথে নিজের মিল খোজার চেষ্টা করি। সেও পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে পারি নি। আমি ও না। তার পছন্দের মেয়েটির ও বিয়ে হয়ে যায়, আমার পছন্দের মেয়েটির ও বিয়ে হয়ে যায়। অমিল হচ্ছে তার হয়তো টাকার না থাকার কারণে বিয়েটা হয় নি। আর আমার টাকা থেকেও…
আমি মেয়েটিকে বুঝতে পারতাম না। বার বার নিজেকে প্রশ্ন করতাম, ইতি আমাকে ভালোবাসে? সুন্দর হাসি আর সুন্দর কথায় আমি বার বার ধোকা খেতাম। নিজেকে শান্তনা দিতাম, সত্যিই আমাকে ভালোবাসে।
ইতি একদিন একটি ছেলে কিয়ে নিয়ে আসল। আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। নিলয়, এ হচ্ছে সূজন।
আমি ভাবলাম পরিচিত কেউ, কাজিন বা কোন বন্ধু। প্রশ্ন করি নি।
আস্তে আস্তে আমার থেকে দূরে সরে যেতে লাগলো। এই অজুহাত ঐ অজুহাত। বিশ্বাস করতাম।
একদিন সুজনের সাথে ইতির এঙ্গেজম্যান্ট হয়ে গিয়েছিলো। আমাকে বলে নি, জানতাম না। এক দিন পর জেনেছি। অন্য বন্ধুর মাধ্যমে। কষ্ট পেয়েছি। আমাকে বলতে পারত। বলে নি। বলতে পারত নিলয়, আমি তোমাকে নয় সূজনকে ভালোবাসি।
এটাকে ধোকা বলে? হয়তো হ্যাঁ। হয়তো না। হয়তো ইতির সময় কাটানোর সঙ্গী ছিলাম। হয়তো তার কাছে আমি বোরিং হয়ে গিয়েছি। নতুন জীবনের জন্য নতুন সঙ্গী খুজে নিয়েছে। আমাকে একা রেখে। সে হয়তো ভালো আছে। সুজন কে বিয়ে করে। আমি ভালো নেই। এখনো প্রেম, ভালোবাসা, বন্ধু এসবের মানে খুজে ফিরি। জানি না কবে এসবের মানে জানতে পারব। আচ্ছা হোটেলের ছেলেটি ও কি এমন মানে খুজে বেড়ায়? জিজ্ঞেস করলে হয়তো বলত। থাক না, কিছু জিনিস না জানাই থাক… এতটুকু জানি, আমি যতটুকু কষ্ট পাই, ছেলেটিও ততটুকু কষ্ট পায়। কষ্ট পরিমাপ করতে পারলে জানতাম কারো কষ্ট কারো থেকে একটুও কম নয়।

টিউশনি

ত্বকির টিউশনির বেতনটা পাবে আজ। খুশি মনে টিউশনিতে গেলো। আচ্ছা গল্প বলার আগে ত্বকির পরিচয়টা দেওয়া যাক।
অন্য সব সাধারণ ছাত্রের মতই একজন। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়তে পড়ে। ম্যাচে থাকে আর নিজের খরচ নিজে বহন করে। এ জন্যই টিউশনি। সাধারণ ছাত্রদের রুজির প্রধান মাধ্যম।
তের বা চোদ্দ বছরের একটি মেয়েকে পড়ায় সে। ভালো ছাত্রী। সব কিছুই সুন্দর মত বুঝতে পারে।
আজ পড়ানোর এক সময় ত্বকি পা নাড়াতে গিয়ে ইভার পায়ে লাগল। ত্বকি সরি বলল। ইভা বলল সমস্যা নেই স্যার।
কোন সমস্যা হতো না যদি না তা ইভার ছোট খালামনির চোখে পড়ত। ইভার খালামনি এদিক দিয়ে যাচ্ছিল, তখনি দেখল।
গৃহ শিক্ষক, স্কুল শিক্ষক এসব নিয়ে পত্রিকায় বা টিভিতে বিভিন্ন নিউজ দেখে সব অভিবাবকই চিন্তিত। আমার সন্তানটি কি নিরাপদ? এসব কিছু ত্বকিকে স্পর্শ করত না যদি ইভার খালামনি তার মায়ের কাছে গিয়ে বলত, ইভার পায়ে স্যারের পা লাগার কথা। দুই বোন, বলা যায় দুই নারী এক সাথে সব কিছু আলোচনা করতে লাগল। ইভার কিসে ভালো হবে তা নিয়ে চিন্তা করতে লাগল।
একসময় ইভাকে ডাকল স্যারের জন্য নাস্তা নিয়ে আসতে। নাস্তা আনতে গেলে ইভার হাতে একটি খাম দেয়। ত্বকির বেতন। ইভাকে বলল স্যারকে যেন বলে আগামীকাল থেকে আর না আসে। ইভা জিজ্ঞেস করল কি সমস্যা? কেন স্যারকে আর আসতে হবে না? তার আম্মু বলল তুই বুঝবি না।
ইভা অনেক কিছুই বুঝে না। সবাই বলে বড় হলে বুঝবি। সে যথেষ্ট বড় হয়েছে, চিন্তা করে আর কত বড় হতে হবে সব কিছু বুঝতে।
ত্বকির নাস্তা খাওয়ার পর ইভা তার হাতে খামটি দিল। ইভার বলতে কষ্ট হচ্ছিল। তারপর ও বলল, স্যার… ত্বকি বলল, কিছু বলবে? স্যার, আম্মু বলেছে আগামীকাল থেকে আপনাকে আর আসতে হবে না।
ত্বকির মন খারাপ হলো। মুখে তা না ফুটিয়েই বলল ঠিক আছে। ভালো থেকো ইভা।
কিছু কিছু মানুষ সব সময়ই ভয়ে থাকে, কি ভুল করেছে। কি ভুল হয়েছে। ভাবে তার জন্যই দূর্ঘটনা গুলো ঘটে। সে না থাকলে হয়তো এমন কিছু হতো না। ত্বকি তেমনি একজন। কি ভুলের কারণে টিউশনিটা গেলো, তা ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরল। ভুল খোজার পাশা পাশি আরো কয়েকটা ভাবনা, পরের মাস থেকে কি হবে, কিভাবে চলবে? কীভাবে ম্যাচের ভাড়াটা দিবে?

আর্টিস্ট ঐ মেয়েটি

মেয়েটির সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল তার স্টুডিও এর দরজায়। হাতে, মুখে, জামাতে রঙ লেগে রয়েছিল। স্টুডিও বললে ভুল হবে, তাদের নিজ বাড়ির একটি রুমের সামনে। যে রুমে সে ছবি আঁকত। সাদা জামায় লেগে থাকা রঙ গুলো আমার কাছে জামারই অংশ মনে হয়েছিল। মনে হয়ছিল কেউ ইচ্ছে করে আর্ট করছে। কিন্তু না, আসলে সে গুলো ভুল ক্রমে ছবিতে রঙ দেওয়ার সময় লেগে গিয়েছিল।
ঐ দিনই আমার মনে হয়েছিল মেয়েটির পাশে একজন থাকা উচিত। তার রঙ এগিয়ে দিতে, তাকে ছবি আঁকতে সাহায্য করতে। গায়ে রঙ লেগে গেলে তা মুছে দিতে…
আমি গিয়েছিলাম একটি ছবির জন্য। গ্যালারিতে ছবি দেখে পছন্দ হয়েছিল। পরে তা আনতে গিয়েছি। ছবিটি আনতে গিয়ে ছবির থেকে আর্টিস্টকে বেশি সুন্দর লাগলো। ছবি থেকে আর্টিটসকে বেশি ভালো লেগে গেলো। এমনকি মেয়েটির সাহায্যকারী হিসেবে নিজেকে ভাবতে লাগলাম। নিজেকে মেয়েটির পাশে চিন্তাও করতে লাগলাম। কি অদ্ভুত!
এরপর কয়েক দিন পর পরই ছবি কিনতে চলে যেতাম। যেখানে ছবি কেনা থেকেও মেয়েটিকে দেখতে যাওয়া মূখ্য ছিল।
এরপর একদিন মেয়েটিকে বললাম এক সাথে লাঞ্চ করি? মেয়েটি না করল। আমি বললাম, ফ্রান্সের মেয়েদের সাথে নাচতে নাকি তিনবারের মত জিজ্ঞেস করতে হয়। প্রথমবারে কেউই রাজি হয় না। আমাকেও কি তিনবার জিজ্ঞেস করতে হবে? মেয়েটি হাসল। সুন্দর সে হাসি।
কিছুক্ষন নিরব থেকে বলল, চলো। আমি বললাম কোথায়? বলল, লাঞ্চ করতে। সত্যি? মেয়েটি বলল, হ্যা সত্যি।
লাঞ্চ করতে বসে আমার কি মিশ্র অনুভূতি। সব ভালো লাগা যেন এক সাথে কাজ করছিল। রেস্টুরেন্ট থেকে হেটে হেটে গল্প করতে করতে তাকে এগিয়ে দিয়ে গেলাম।
সময় পেলে এরপর প্রায় সময়ই যাই। বসে বসে ছবি আকা দেখি। নাকে মুখে রঙ লেগে যাওয়া দেখি। দেখতে ভালো লাগে। মাঝে মধ্যে আবার রঙ, ব্রাশ ও এগিয়ে দি। সাহায্যকারী হিসেবে। একদিন ঠিক যেভাবে চিন্তা করেছি।

ভালোবাসি তাই…

ঐ দিন তারিন আমাকে ডাকল। শেষ দেখা হয়েছিল তার বিয়ের দিন। ওর বিয়েতে যেতে কষ্ট হয়েছিল। তারপর ও গিয়েছি। ক্লাসমেটেরা সবাই ছিল। ছিল পরিচিত অনেকেই। না গেলে সবাই খারাপ বলত। তাই ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও গিয়েছি।
আমি তারিনের বন্ধু ছিলাম। আর তারিন ছিল আমার স্বপ্ন। নিজের স্বপ্নের কথা কোন দিন ও তারিনকে জানাই নি। বন্ধুর মত অভিনয় করে গিয়েছি। এর এক সময় স্বপ্নের কথা বলব বলে ঠিক ও করেছি। কিন্তু তখন ভীষণ দেরি হয়ে গিয়েছিল।
আমি পছন্দ করতাম তারিন কে। আর তারিন ভালবাসত স্বপ্নিল কে। আসলে তারা দুই জন দুই জনকেই ভালোবাসত। তারিন তাদের গল্প আমার কাছে এসে বলত। আমি শুনতাম। প্রচণ্ড হিংসে হতো। তারপর ও বন্ধুর মত শুনে যেতাম। বন্ধুর মত।
তারা বিয়ে শাদী করে সংসার শুরু করল। আর আমি চলে যাই ডক্টরেট করতে। রোবট নিয়ে পড়তে পড়তে ততদিনে আমি নিজেও রোবট হয়ে গিয়েছিলাম। মানব অনুভূতি গুলো লোপ পাচ্ছিল। সহ কর্মী একটা মেয়ে তা ফিরিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছিল। মেয়েটি অনেক সময় দিচ্ছিল আমাকে। রিসার্সের ফাঁকে ফাঁকে গল্প করত। আমি আমার দেশের গল্প করতাম। ছোটবেলার গল্প বলতাম। বেড়ে উঠার গল্প বলতাম। জেনি নামের মেয়েটি বলত তার গল্প। এক জন সহকর্মীর মতই। এর বেশি কিছু না।
জেনি আমাকে মাঝে মাঝে ঘুরতে নিয়ে যেতো। উৎসাহ না থাকা সত্ত্বেও যেতাম। অ্যামেরিকায় সাধারণত ছেলেরা মেয়েদের প্রপোজ করে। হঠাৎ করে একদিন জেনি আমাকে প্রপোজ করে বসল। আমি অবাক হলাম। আমি বললাম, জেনি এভাবে হয় না। অনেক কিছু বুঝানোর চেষ্টা করলাম ঐ দিন। বুঝে নি। চোখে এত গুলো পানি নিয়ে বাসায় ফিরে গেলো। পরের দিন আর ল্যাবে আসে নি। পরে দিন ও না। এর পরের দিন ও না। আমি ফোন করি, ফোন রিসিভ করে না। একটু চিন্তিত হয়ে পড়লাম। চিন্তা করলাম এবার একটু বাসায় গিয়ে খবর নেওয়া যাক।
জেনিদের বাসায় ঐ দিনই প্রথম যাওয়া। গিয়ে দেখি ও অসুস্থ হয়ে শুয়ে আছে। আমার সাথে কথা বলবে না। আমি জোর করে ওকে নিয়ে বের হলাম। একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম। মুখ ভার হয়ে ছিল। কোন কথার উত্তর দিচ্ছিল না। আমি ওর মুড ঠিক করার জন্য বললাম চল বিয়ে করি। আমার দিকে তাকালো। সত্যি? আমি বললাম হ্যাঁ, সত্যি। ও চেয়ার ছেড়ে লাপ দিয়ে এসে আমার উপর ঝাফিপে পড়ল। এত জোরে জড়িয়ে ধরল যে আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। রেস্টুরেন্টের অন্যান্য মানুষ তাকিয়ে রইলো। জেনি যখন চিৎকার করে বলল i love you, তখন অন্য সবাই তালি দেওয়া শুরু করলো।
রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া ছাড়াই বের হয়ে আসলাম আমরা। ঐ দিনই জেনিকে বিয়ে করলাম। নিজেকে নিজে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বিয়ের পর সবই ঠিক মত চলছিল। আমাদের কিউট একটি মেয়েও হয়েছিল। তিন জনের সংসার। খুব সুন্দর ভাবে কাটছিল।
এরপর এক সময় থিসিস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। খাওয়া দাওয়া, ঘুম, ফ্যামিলিতে সময় দেওয়া সহ সব কিছুইতে অনিয়মিত হয়ে পড়লাম। জেনির সাথে দুই একবার কথা কাটা কাটি ও হতে লাগল।
একদিন জেনি আমাকে বোর, ডাল আরো কত কিছু বলে ছেড়ে চলে গেলো। যাওয়ার সময় মেয়েটিকেও নিয়ে গেলো। আমি বললাম অন্তত মেয়েটিকে রেখে যাও। সে হেনাকেও রেখে যায় নি। কষ্ট পেতে মনে হয় অব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। প্রথম রাত ঘুমুতে পারি নি। দ্বিতীয় রাত থেকে ঠিকই আবার কাজে মনোযোগ দিয়েছিলাম। তৃতীয় রাতে জেনি এসে হেনাকে দিয়ে গেলো। হেনা নাকি কান্না করছিল শুধু। মেয়েটি আমাকে দেখে শান্ত হলো।
থিসিস জমা দিয়ে দেশে ফিরলাম। তারিন জানতে পেরে ডাকল। তাই দেখা করতে আসা।
তারিন অনেক দিন পর দেখা হওয়ার পর অনেক কিছুই বলল। বলত তারা ভালো নেই। তাদের সম্পর্ক ভালো নেই। অথচ এই স্বপ্নিল তাকে অনেক ভালোবাসার কথা বলত। তাকে স্বপ্ন দেখাতো সুন্দর একটা পৃথিবীর, সারাজীবন আগলে রাখবে বলত। সারাজীবন এক সাথে কাটিয়ে দিবে বলত। কিন্তু তার ব্যবহার আস্তে আস্তে খারাপ হতে থাকে যখন ডাক্তার বলে তারিন কখনো মা হতে পারবে না।
অনেক দিন পর বন্ধুকে কাছে পেয়ে সব বলল। বলার সময় চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। আমি টিস্যু এগিয়ে দিলাম। চোখ মুছল। মুছে আমার কথা জিজ্ঞেস করল। আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করল। উত্তর দিলাম ভালো আছি। অনেক ভালো। অনেক দূরে তকালাম। কাছের সব কিছু কেমন ঝাপসা লাগছিল।
অ্যামেরিকা ফিরে যাওয়ার আগে তারিনের সাথে দেখা করতে গেলাম। সাথে ছিল হেনা। তারিন হেনাকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগল। অনেক কথা বললাম। ফ্লাইটের সময় হচ্ছিল। স্বপ্নিলকে বললাম আমি ফিরে যাচ্ছি। হেনাকে তোমাদের কাছে রেখে যাই। তারিন লাফিয়ে উঠে জিজ্ঞেস করল সত্যি? আমি উত্তর দিতে পারি নি।
টিক টিক করে সময় যাচ্ছে। আমি বের হলাম। তারিন এগিয়ে দিল। স্বপ্নিল হেনাকে কোলে করে আরেকটি রুমে গেলো। যে রুমে বাচ্চাদের অনেক গুলো খেলনা। তারিনের চোখে আজ ও পানি। বলতে ইচ্ছে করছিল, কান্না করিস না পাগলি, আমার মেয়েটিকে ভালো রাখিস। বলি নি। বলতে পারি নি। হাঁটা দিলাম।
কিছু দূর গিয়ে পেছনে ফিরলাম, জানালা দিয়ে দেখলাম হেনা এদিকে তাকিয়ে আছে। চোখ ছল ছল করছে। স্বপ্নিল অনেক গুলো খেলনা নিয়ে তাকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করছে। অন্ধকার বলে আর আমাকে কেউ দেখছে না। চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। অন্ধকার বলে তা আর লুকাতে হয় নি। কেমন এক ধরনের কষ্ট লাগছিল। আবার সুখ ও। মনে হচ্ছিল রোবটের সাথে থেকে এখনো রোবট হয়ে যাই নি। মানুষই রয়েছি। কারণ রোবটের চোখ দিয়ে কখনো পানি বের হয় না, হবে না।